Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাছ চাষের জন্য পুুকুর প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপসমূহ

কমর-উন-নাহার১

নদীমাতৃক বাংলাদেশে এক সময় প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। তখন জনসংখ্যাও কম ছিল বিধায়, প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত মাছে আমাদের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হতো। সময়ের সাথে সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নগরায়ন, কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নি:সরণ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মাছের     প্রাকৃতিক আবাস্থল ধ্বংস হয়ে প্রাকৃতিক উৎস হতে মাছের প্রাচুর্যতা দিন দিন হ্রাস পেয়েছে। এমতাবস্তায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক আমিষের চাহিদা পূরণের  লক্ষ্যে আমরা পুকুরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছি। আমাদের খাদ্যে প্রাপ্ত প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দেয় মাছ।
মাছ চাষ একটি লাভজনক বিনিয়োগ। কোনো জলাশয়ে বা পুকুরে প্রাকৃতিক উপায় বা স্বাভাবিকভাবে যে মাছ উৎপাদিত হয় সে জলাশয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগ করে তার চেয়ে অধিক উৎপাদনের কৌশল বা পদ্ধতিকে মাছ চাষ বলা হয়। মাছ চাষের মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব।
সাধারণভাবে পুকুরের মাছ চাষ পদ্ধতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১. সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
২. আধা নিবিড় মাছ চাষ ।
৩. নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
মাছ চাষের পূর্বশর্ত পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুতি  
পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুতির  ধাপগুলো সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করতে পারলে মাছ চাষ প্রক্রিয়াটি অনেকটাই ফলপ্রসূ হয়।
পুকুর নির্বাচন : এখানে কার্প মিশ্রচাষের পুকুর নির্বাচনের ওপরে আলোকপাত করা হলো, কার্প মিশ্র চাষ বলতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালীবাউস, সিলভারকার্প, গ্রাসকার্প, কমনকার্প, রাজপুঁটি প্রভৃতি মাছকে কার্পজাতীয় মাছ বলা হয়। এসব মাছ পুকুরের বিভিন্ন স্তর থেকে বিভিন্ন খাবার খায়। এজন্য বিভিন্ন স্তরে উৎপাদিত       প্রাকৃতিক খাদ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত এবং অধিক উৎপাদনের জন্য একটি পুকুরের সর্বোচ্চ ব্যবহার বাড়াতে পুকুর নির্বাচনের সময় নি¤েœাক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।
 া পুকুরটি লোকালয় বা বাড়ির কাছাকাছি হলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয়।
া সাধারণত দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ মাটির পুকুর মাছ চাষের জন্য উত্তম।
া যে কোনো আয়তনের পুকুরে মাছ চাষ করা যায়। তবে ৩০ শতাংশ থেকে ১ একর আকারের পুকুর বেশি উপযোগী। পুকুরের পাড় এমন উঁচু হতে হবে যাতে বন্যায় প্লাবিত না হয়।
া পানির গভীরতা ১.৫ থেকে ২ মিটার হলে ভালো।
পুকুর প্রস্তুতকরণ (সাধারণত মার্চ ও এপ্রিল মাসে পুকুর প্রস্তুত) :
া আশানুরূপ ফল পাওয়ার জন্য পুকুরের পাড় মেরামত ও তলা সমান করতে হবে।
া পুকুর পাড়ের ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করতে হবে। ছায়া সৃষ্টিকারী কোনো গাছ থাকলে কেটে ফেলতে হবে।
া পুরাতন পুকুরে কাদার পরিমাণ বেশি থাকে। তাই অধিক কাদা তুলে ফেলতে হবে।
া পুকুরে কোনো জলজ আগাছা, রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ রাখা যাবে না।
া পুকুর শুকিয়ে মাছ সম্পূর্ণভাবে তুলে ফেলা উত্তম।  ৪০ গ্রাম/শতাংশ/ফুট পানি হিসেবে রোটেনন প্রয়োগ করে এই রাক্ষুসে অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা যায়। পরিমাণ মতো পানি নিয়ে তাতে রোটেনন পাউডার মিশিয়ে কাঁই তৈরি করতে হবে। তারপর ১/৩ অংশ আলাদা করে তা দিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করতে হবে। বাকি অংশ বেশি পানিতে গুলিয়ে পাতলা করতে হবে। এরপর কড়া রোদের সময় পাতলা অংশ সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং বলগুলো সমভাবে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
রোটেনন প্রয়োগের সময় নাকেমুখে কাপড় ও হাতে পলিথিন বেঁধে নিতে হবে; বাতাসে অনুক‚লে ছিটাতে হবে। এসব সাবধানতা অনুসরণ করতে হবে।
চুন প্রয়োগ : মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহারিত বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে চুন অন্যতম।
চুন প্রয়োগের উপকারিতা : পানি পারিষ্কার করে;                                     রোগবালাই দূর করে; পানির ঘোলাত্ব দূর করে; মাটি থেকে পানিতে পুষ্টি  মুক্ত করে; পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে; মাছের আঁইশ ও কাঁটা গঠনে সহায়তা করে; পানির অ¤øøত্ব দূর করে; বিষাক্ত গ্যাস দূর করে, বাফার হিসেবে কাজ করে।
চুন প্রয়োগের মাত্রা ও পদ্ধাতি : প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে টিনের বালতি বা ড্রাম, সিমেন্টের চাড়ির মধ্যে চুন দিয়ে মুখ চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তারপর চটের বস্তার উপর আস্তে আস্তে পানি ঢালতে হবে। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পরে আরো পানি মিশিয়ে পাতলা করে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এ কাজটি রোদের সময় করতে হবে।
সাবধানতা : প্লাস্টিকের পাত্রে চুন ভেজানো যাবে না; মাটির চাড়ি বা টিনের বালতি বা ড্রামে চুন ভেজাতে হবে; চুন প্রয়োগের সময় নাক মুখ গামছা দিয়ে বেধে নিতে হবে; বাতাসের অনুক‚লে চুন ছিটাতে হবে, শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ : চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পরে সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। যা কার্প মাছের পুকুরের প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক খাদ্য। এগুলো বিভিন্ন ধরনের ফাইটোপ্লাংকটন ও জুপ্লাংকটন। পুকুরের উর্বরতার ওপর সার প্রয়োগ নির্ভর করে। তবে পুকুর প্রস্তুতির সময় নিদিষ্ট মাত্রায় সার প্রয়োগ করা উত্তম।
পুকুরের প্রয়োগের কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা আগে টিএসপি ও সরিষার খৈল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পুকুরে প্রয়োগের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিয়ে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার প্রয়োগের আগে পানিতে গুলিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। কাজগুলো অবশ্যই রোদের সময় করতে হবে।
প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা : সার প্রয়োগের ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়ে যাবে। পানির রং হালকা সবুজ, বাদামি সবুজ ও লালচে সবুজ হলে বুঝতে হবে খাদ্য তৈরি হয়েছে। পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা যায় ৩টি পদ্ধতিতে। যেমন : সেকি ডিস্ক পদ্ধতি, গামছা গøাস পদ্ধতি, হাত দ্বারা।
সেকি ডিস্ক পদ্ধতি : সেকি ডিস্ক একটি টিনের সাদা কালো চাকতি। যার ব্যস ২০ সেমি.। লাল, সবুজ , সাদা এই তিন রঙের সুতা দ্বারা ঝুলানো থাকে।
ি সেকি ডিস্কটি লাল সুতা পর্যন্ত ডুবতেই যদি প্লেটটি অদৃশ্য হয়ে যায় তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি আছে। এ অবস্থায় মাছের পোনা ছাড়া যাবে না ।
ি সবুজ সুতা পর্যন্ত ডুবতেই যদি প্লেটটি অদৃশ্য হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য পরিমাণমতো আছে। মাছের পোনা ছাড়া যাবে।
ি সাদা সুতা পর্যন্ত ডুবতেই যদি প্লেটটি অদৃশ্য হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে খাদ্য নেই। এই অবস্থায় সার প্রয়োগ করতে হবে।
কাজগুলো অবশ্যই সকাল ১০-১১ টার সময় সূর্যালোকিত দিনে করতে হবে। মেঘলা দিনে নয়।
গামছা গøাস পদ্ধতি : পুকুরের পানি স্বচ্ছ কাঁচের গøাসে নিতে হবে; সূর্যের আলোতে গ¬াসটি ধরতে হবে; গøাসের মধ্যে ১০-১২টা প্রাণিকণা দেখা গেলে বুঝতে হবে পুকুরে    পরিমিত খাদ্য আছে; অবশ্যই পরীক্ষাটি সকাল         ১০-১১টায় সূর্যালোকিত দিনে করতে হবে; পানি ঘোলা হলে পরীক্ষার ফলাফল ভালো আসবে না ।
হাত পদ্ধতি : সকাল ১০-১১টায় সূর্যালোকিত দিনে হাতের কনুই পযন্ত পুকুরের পানিতে ডুবাতে হবে যদি হাতের তালু দেখা যায় তাহলে বুঝতে খাদ্য তৈরি  হয়নি। হাতের তালু দেখা না যায় তাহলে বুঝতে খাদ্য তৈরি  হয়েছে।
পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা : পোনা ছাড়ার একদিন আগে পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করে নিতে হবে। একটি বালতি বা পুকুরে হাপা স্থাপন করে কিছু পোনা ছেড়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদি পোনা মারা যায় বুঝতে হবে পানির বিষাক্ততা রয়ে গেছে, এই অবস্থায় পোনা ছাড়া যাবে না। কিছুদিন অপেক্ষা করে আবার পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করে পোনা ছাড়তে হবে ।
পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুতি  উল্লেখযোগ্য ধাপ ও পদ্ধতিসমূহ মেনে পুকুর প্রস্তুত করলে  মৎস্যচাষের জন্য আশানুরূপ ফল পাওয়া সম্ভব। পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি কাজটি সাধারণত মার্চ ও এপ্রিল মাসে করা হয় কারণ এই সময় পোনার প্রাপ্তি সহজ হয়। য়
 
     

১মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ।  ই-মেইল : qunahar8@gmail.com, ফোন: ০১৮১৮৪৪০০৭২                                                                                                                                                                                                                     

                                                                            
                                            

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon